অনেকে লিনাক্সকে জটিল মনে করে এড়িয়ে চলেন কিন্তু এ জটিলতাই অপারেটিং সিস্টেমটিকে দারুন একটি সিস্টেমে পরিনত করেছে। তারপরও কোন জটিল বিষয়কে যদি ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে বিশ্লেষন করা যায় তাহলে সেটি সহজ একটি বিষয়ে পরিনত হয়।
মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ মার্কেটে আবির্ভূত হওয়ার ও আগে ম্যাকিন্টোশ কম্পিউটার ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। একজন নতুন কম্পিউটার ব্যবহারকারীর জন্য একটি ছোট ছবিতে মাউস দিয়ে ক্লিক করে কাজ করার অভিজ্ঞতা অবশ্যই ডসের কমান্ড মোডে মুখস্থ করে কমান্ড দেয়ার থেকে অনেক বেশী আবেদনময় ছিল নিঃসন্দেহে। তবে ম্যাকে ব্যাচ ফাইল তৈরী করা যেত না, কোন পোর্টে টেক্সট অথবা ফাইলসমূহ রিডাইরেক্ট করা যেত না, কমান্ড এ ইনপুটকে পাইপিং করা বা কোন কমান্ড এর আউপুটকে ভিত্তি করে কোন কাজ পরিচালনা করা ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কথা উদাহরনস্বরূপ বলা যায়- যা ম্যাকের গ্রাফিক্যাল পরিবেশে করা সম্ভব ছিল না। যদিও ম্যাকের গ্র্যাফিকাল পরিবেশে অনেক সহজে কাজ করা যায় কিন্তু এটি হার্ডওয়্যার এবং অপারেটিং সিস্টেম এর কার্নেল থেকে ব্যবহারকারীকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে ফলে কাজ অটোমোশন করা এবং বিবিধ নির্দেশনা দেয়ার কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। অটোমোশন বা স্বয়ংক্রিয়তাই কি কম্পিউটার ব্যবহারের অন্যতম উদ্দেশ্য নয়? কিন্তু ম্যাকের এই গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস এর কাজ ছিল সম্পূর্ন ভিন্ন। এটিতে প্রতিটি কাজের জন্যই ব্যবহারকারীর নির্দেশনার প্রয়োজন হত। উইন্ডোজ এবং লিনাক্স এর সার্ভারের মধ্যে তুলনা করে যদি সমীকরন আকারে দেখানো যায় তা হবে অনেকটা এরকমঃ
সাধারনতা = সীমাবদ্ধতা
জটিলতা = সক্ষমতা
এটি প্রায় সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। একটি সাধারন অডিও সিস্টেম তা যতই সহজভাবে পরিচালনা করা যাক না কেন একটি ১৫-ব্যান্ড ইকুয়ালাইজার এর মত মানসম্পন্ন কোয়ালিটি আউটপুট দিতে সক্ষম হবে না। উইন্ডোজ সার্ভার ওএস শেখা অনেক সহজ মনে হতে পারে তবে আপনাকে প্রতিটি কাজ নিজ হাতে ইনপুট প্রদানের মাধ্যমেই সম্পন্ন করতে হবে এবং স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম তৈরী করার ক্ষমতা হ্রাস করেই তা করতে হবে। অটোমেশন যা কম্পিউটারকে নিজে নিজেই কাজ করতে সক্ষম করে তোলে সেটিই সত্যিকারের প্রোডাক্টিভিটি আনতে সক্ষম এবং একটি প্রতিষ্ঠানের তুলনামুলক সুবিধাকে বাড়িয়ে খরচ কমাতে ভূমিকা রাখে।
লিনাক্স অনেক বেশী হার্ডওয়্যার প্লাটফরম সাপোর্ট করে থাকে এবং ডেবিয়ান লিনাক্স তার মধ্যে অন্যতম যেটি বিভিন্ন প্লাটফর্ম সাপোর্ট এর জন্য ভিন্ন ভিন্ন ডিস্ক সেট অফার করে থাকে। এজন্যই ডেবিয়ান এর সিডি/ডিভিডি-তে ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফরমের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রতীক ব্যবহার করে থাকে যেমন - ইন্টেল প্রসেসর এর জন্য 'i386' , পুরাতন ম্যাক কম্পিউটারের জন্য 'PPC' , সান সিস্টেমের জন্য 'Sparc' এবং এমন কি আইবিএম মেইনফ্রেম কম্পিউটারের জন্য ও রয়েছে 's390' । এছাড়া পুরো অপারেটিং সিস্টেম এবং এর সাথে যত প্রোগ্রাম ও ব্যবহারিক প্রোগ্রাম রয়েছে সেগুলির সোর্স কোড সম্বলিত সোর্স ডিস্ক ও পাওয়া যায় আলাদাভাবে। যদি আপনার সি প্রোগ্রামিং জানা থাকে (অথবা যদি সি তে প্রোগ্রামিং শিখতে চান) তাহলে এগুলি আপনার-ই জন্য এবং ডেবিয়ান অপারেটিং সিস্টেম ও এর সাথে যত ধরনের প্রোগ্রাম পাওয়া যায় সবকিছুর সোর্স কোড দেখতে চাইলে দেখতে পারবেন। যদি ডেবিয়ানকে স্ট্যান্ডার্ড ইন্টেল/এএমডি/সাইরিক্স এর পিসিতে ইনস্টল করেন তবে 'i386' ডিস্ক সেট প্রয়োজন হবে।
লিনাক্স একটি বিখ্যাত অপারেটিং সিস্টেম। তবে এটি বিভিন্ন কোম্পানি কর্তৃক বের হয়ে থাকে যেটি উইন্ডোজ এর কনসেপ্ট থেকে একটু ভিন্ন প্রকৃতির। এ সমস্ত কোম্পানিগুলি তাদের নিজস্ব কিছু স্ট্যান্ডার্ড এর সাথে যোগ করেই মার্কেটে ছাড়ে যেমনঃ গ্রাফিক্যাল ইনস্টলেশন টুলস, কিন্তু তারা সবাই লিনাক্স কার্নেলের যেকোন একটি ভার্সন ব্যবহার করে থাকে যেটি অপারেটিং সিস্টেমের মূল অংশ। বিভিন্ন কোম্পানি কর্তৃক যে লিনাক্স বের হয় এগুলিকে ডিস্ট্রিবিউশন বলা হয়ে থাকে (অথবা সংক্ষেপে ডিস্ট্রো)। রেডহ্যাট বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিস্ট্রো এবং সুসি, ম্যানড্রেক/ম্যানড্রিভা এর কথাও উল্লেখযোগ্য। বানিজ্যিক ডিস্ট্রিবিউশনগুলি থেকে কোম্পানিসমূহ বিক্রয় এবং সাপোর্ট এর মাধ্যমে আয় করে থাকে। ডেবিয়ান এদের থেকে কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির। এটি একটি নেতৃত্বদানকারী অবানিজ্যিক ডিস্ট্রিবিউশন যেটি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ডেভেলপারদের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পরিচালিত হয় শুধুমাত্র ফ্রি এবং ওপেন সফটওয়্যার এর ধারনাকে উৎসাহিত করার জন্য- যার উপর ভিত্তি করেই সর্বপ্রথম লিনাক্স তৈরী করা হয়েছিল।
যদিও অনেকে লিনাক্স বলতে পুরো অপারেটিং সিস্টেমকেই বুঝে থাকেন কিন্তু কারিগরি দিক থেকে দেখলে লিনাক্স হচ্ছে মূল কার্নেল যার উপর ভিত্তি করে অন্যান্য ফ্রি জিএনইউ প্রোগ্রামসমূহ যেমনঃ গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস, কমান্ড লাইন প্রোগ্রাম ইত্যাদি কাজ করে থাকে। এজন্যই ডেবিয়ান কে অফিসিয়ালি “ডেবিয়ান জিএনইউ/লিনাক্স” নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
যদি কোন কোম্পানি সাধারন কোন জিএনইউ প্রোগ্রামকে কাস্টমাইজ করে তার নিজস্ব কোন ভার্সনকে ব্যবহার করা শুরু করে তখন এটি আর ফ্রি থাকে না বরং স্বত্বাধিকার স্বত্ব আরোপিত হয়ে যায়। এখানেই ডিস্ট্রিবিউশন নির্ভর সমস্যার উৎপত্তি যার ফলস্বরূপ আপগ্রেড/সাপোর্ট পাওয়ার জন্য অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়।
রেড হ্যাট কোম্পানি এ ধরনের বিভিন্ন স্ট্যান্ডার্ড জিএনইউ ইউনিক্স লিনাক্স কমান্ডগুলোর বদলে তাদের নিজস্ব স্বত্বাধিকার নির্ভর নন-স্ট্যান্ডার্ড টুলস/কমান্ড ব্যবহার করার জন্য প্রসিদ্ধ(!)। ফলস্বরূপ ওয়েব এবং অন্যান্য জায়গায় লিনাক্স এর যে সমস্ত বই/রেফারেন্স ফ্রি পাওয়া যায় সেগুলির সাহায্য নিয়ে রেডহ্যাট লিনাক্স সিস্টেমে কাজ করা যায় না। এমনকি রেডহ্যাট এর আগের ভার্সনগুলির উপরে লেখা বই ও কোন কোন ক্ষেত্রে বর্তমান ভার্সনে কাজে লাগে না কারন প্রতি নতুন ভার্সনে তাদের কমান্ড প্রায়ই পরির্বতিত হয়। এ রকম চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছর পর রেড হ্যাট কে আদৌ লিনাক্স বলে মনে হবে কিনা তা বলা সত্যিই কঠিন।
ডিস্ট্রিবিউশনগুলিতে কনফিগারেশন ফাইলগুলি কিছুটা ভিন্ন জায়গায় এবং ভিন্ন নামে থাকতে পারে। উদাহরনস্বরূপ, নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কনফিগারেশন (NIC)-
Debian - /etc/network/interfaces
Red Hat - /etc/sysconfig/network-scripts/ifcfg-eth0
(A separate file for each interface)
Suse - For versions >= 8.0
/etc/sysconfig/network/ifcfg-eth0
(A separate file for each interface)
For versions <>